মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ভারতীয় বাঙালি কথা সাহিত্যিক। রবীন্দ্রত্তর যুগে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বিশিষ্ট শক্তিমান লেখক। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বাস্তববাদী ও রিয়েলাস্টিক সাহিত্যিক অনেকে এ বিষয়ে তাকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় ভূষিত করেন।
নাম (Name) | মানিক বন্দোপাধ্যায় (Manik Bandopadhyay) |
জন্ম (Birthday) | ১৯০৮ খ্রিঃ ১৯ শে মে (19th May 1908) |
জন্মস্থান (Birthplace) | বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকায় |
অভিভাবক (Guardian) / পিতামাতা | বাবা– হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়, মা– নীরদাসুন্দরী |
পেশা (Occupation) | ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার |
জাতীয়তা (Nationality) | ভারতীয় (Indian) |
দাম্পত্য সঙ্গী (Spouse) | কমলাদেবী |
উল্লেযোগ্য রচনাবলী | অহিংসা ( ১৯৪১ ) , দর্পণ ( ১৯৪৫ ) , চিহ্ন ( ১৯৪৭ ) , চতুষ্কোণ ( ১৯৪৮ ) , সােনার চেয়ে দামী ( ১৯৫২ ) , হারানের নাতজামাই । |
উল্লেযোগ্য উপন্যাস | পদ্মানদীর মাঝি , পুতুলনাচের ইতিকথা , অমৃতস্য পুত্রাঃ , শহরতলী , প্রাণেশ্বরের উপাখ্যান প্রভৃতি । |
মৃত্যু (Death) | ১৯৫৬ খ্রিঃ ৩ রা ডিসেম্বর |
জন্ম পরিচয়
হৃদয়বান, মানবপ্রেমী, রিয়েলাইস্টিক ও বাস্তববাদী কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯মে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বিহারের সাঁওতাল পরগনা দুমকা শহরে। তার পিতার নাম হরিহার বন্দ্যোপাধ্যায় মাতার নাম নীরদা সুন্দরী দেবী। তার পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে।
শৈশবকাল
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতা হরিহর ছিলেন সরকারি চাকুরে সে কারণে কর্মসূত্রে তাকে নানা স্থানে বদলি হতে হয় তাই মানিকের শৈশব কালও কেটেছে নানা স্থানে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দুমকা আর সাসারাম, কলকাতার বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, শালবনী, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি অঞ্চলে। শৈশব নানা স্থানে কাটায় জীবনযাত্রা সম্পর্কে নানান অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তার জীবনবোধ সম্বন্ধে সজাগ চেতনা গড়ে উঠেছিল যা পরবর্তীকালে তার সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছিল।
শিক্ষাজীবন
১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মেদনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বাঁকুড়া ওয়েলেস মিশন কলেজ থেকে আই এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। কলেজে পড়াকালীন তিনি সাহিত্য ক্ষেত্রে বেশ খ্যাতি অর্জন করেন এই খ্যাতি তার কলেজ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়| তার আর বি এস সি পরীক্ষা দেয়া হয় না। তিনি সাহিত্যকেই জীবিকা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে সে সময়ে চলেছে কল্লোল যুগ । শুরু হলাে নিরন্তর সাহিত্য সাধনা।
প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কেন “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়” নামে পরিচিত হলেন ??
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতার দেওয়া নাম প্রবোধ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় । কিন্তু জন্মকালে তার গায়ের রং ছিল কালো কিন্তু মুখশ্রী খুব সুন্দর ছিল তাই ভালোবেসে তাকে সবাই ‘কালো মানিক’ বলে ডাকতো। মানিক কলেজে পড়াকালীন একদিন এক বন্ধুর সাথে বাজি ধরেন তিনি তার লেখা গল্প ‘বিচিত্রা পত্রিকায়’ ছাপাবেন। সে সময় কলকাতার নামকরা পত্রিকা ছিল বিচিত্র পত্রিকা শুধুমাত্র নামিদামি লেখকেরাই সেখানে লিখতে পারতেন। বাজির কথা মত মানিক লিখে ফেললেন তার প্রথম গল্প ‘অতসী মামী’। প্রথম গল্প তাই একটু জড়তা ছিল তার মধ্যে সে কারণে গল্পের শেষে স্বাক্ষর অংশে তার পিতৃ প্রদত্ত নাম প্রবোধ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় না লিখে, তার ডাক নাম মানিক বন্দোপাধ্যায় লিখে স্বাক্ষর করেন। সে সময় বিচিত্র পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। মানিক গল্পটি পাঠানোর ঠিক চার মাস পর বিচিত্রা পত্রিকায় গল্পটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয়। পাঠক মহলে সরগোল পড়ে যায় একজন নতুন লেখকের লেখা গল্প জনপ্রিয়তা পায় । সাহিত্য জগতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামটি খ্যাতি অর্জন করে। সেখান থেকে সাহিত্যজগতে ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন ।
কর্মজীবন
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কল্লোল পত্রিকায় লেখা শুরু করেন। সে সময় যে তিনজন “বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রয়ী” খ্যাতি পেয়েছিল-তারা হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ । তিনি পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসাবে ও কাজ শুরু করেন । তিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে একটি প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা কিছুদিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় । ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকটা মাস সরকারি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে কমলা দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। এই সময় থেকে তার লেখায় কমিউনিজমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রগতি লেখক সংঘের যুগ্ম-সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় দাঙ্গা বিরোধ আন্দোলনের তিনি নিজে ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রগতি সংঘে লেখক ও শিল্পী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
সাহিত্যজীবন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন মধ্যবিত্ত মানসিকতার মানুষ। তিনি ফ্রয়েডীয় ও মার্কসবাদ মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল তার অধিকাংশ লেখার মধ্যে এর প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায়। তার লেখা প্রথম গল্প ‘অতসী মামী’, প্রথম উপন্যাস ‘দিবারাত্রি কাব্য’। তার লেখার মধ্যে মধ্যবিত্ত দরিদ্র মানুষের চিত্র ফুটে ওঠে। সে কালের সমকালীন সময়ের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সে সময়ে রাজনীতি,অর্থনৈতিক অবস্থা, সামাজিক চিত্র সাহিত্য অঙ্কন করেছেন। তার লেখা উপন্যাসের সংখ্যা ৪০টি এবং ৩০০ টি ছোটগল্প রচনা করেছেন। তার লেখা ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ বিখ্যাত দুটি উপন্যাস এছাড়াও তার লেখা কয়েককটি উপন্যাস হলো – ‘জননী’ (১৯৩৫), ‘দর্পণ’(১৯৪৫),‘সহরবাসের ইতিকথা’ (১৯৪৬),’চতুষ্কোণ’ (১৯৪৮), ‘স্বাধীনতা স্বাদ’(১৯৫১),সোনার চেয়ে দামি (১৯৫১), ‘ইতিকথার পরের কথা’(১৯৫২), ‘হলুদ নদী সবুজ বন’(১৯৫৬) ইত্যাদি। ‘সরীসৃপ’, ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘কুণ্ঠ রোগীর বউ’, ‘হলুদ পোড়া’,’শিল্পী হারানের নাতজামাই’, ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী’ প্রভৃতি বিখ্যাত ছোট গল্প তিনি রচনা করেছেন।
উপন্যাস | হরফ (১৯৫৪) | শুভাশুভ (১৯৫৪) |
দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫) | ধরাবাঁধা জীবন (১৯৪১) | পেশা (১৯৫১) |
জননী (১৯৩৫) | চতুষ্কোণ (১৯৪২) | স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১) |
পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬) | প্রতিবিম্ব (১৯৪৩) | সোনার চেয়ে দামী (প্রথম খণ্ড) (১৯৫১) |
পদ্মানদীর মাঝি(১৯৩৬) | দর্পণ (১৯৪৫) | সোনার চেয়ে দামী (দ্বিতীয় খণ্ড) (১৯৫২) |
জীবনের জটিলতা (১৯৩৬) | চিন্তামণি (১৯৪৬) | ইতিকথার পরের কথা (১৯৫২) |
অমৃতস্য পুত্রাঃ (১৯৩৮) | শহরবাসের ইতিকথা (১৯৪৬) | পাশাপাশি (১৯৫২) |
শহরতলি (প্রথম খণ্ড) (১৯৪০) | চিহ্ন (১৯৪৭) | সার্বজনীন (১৯৫২) |
শহরতলি (দ্বিতীয় খণ্ড) (১৯৪১) | আদায়ের ইতিহাস (১৯৪৭) | নাগপাশ (১৯৫৩) |
অহিংসা (১৯৪১) | জীয়ন্ত (১৯৫০) | ফেরিওয়ালা (১৯৫৩) |
আরোগ্য (১৯৫৩) | চালচলন (১৯৫৩) | তেইশ বছর আগে পরে (১৯৫৩) |
পরাধীন প্রেম (১৯৫৫) | হলুদ নদী সবুজ বন (১৯৫৬) | মাশুল (১৯৫৬) |
ছোটগল্প | লাজুকলতা (১৯৫৪) | আত্নহত্যার অধিকার |
অতসী মামীও অন্যান্য গল্প (১৯৩৫) | ভেজাল (১৯৪৪) | খতিয়ান (১৯৪৭) |
প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭) | হলুদপোড়া (১৯৪৫) | মাটির মাশুল (১৯৪৮) |
মিহি ও মোটা কাহিনী (১৯৩৮) | টিকটিকি | ছোট বড় (১৯৪৮) |
সরীসৃপ (১৯৩৯) | হারানের নাতজামাই | ছোট বকুলপুরের যাত্রী (১৯৪৯) |
বৌ (১৯৪০) | আজ কাল পরশুর গল্প (১৯৪৬) | ফেরিওলা (১৯৫৩) |
সমুদ্রের স্বাদ(১৯৪৩) | পরিস্থিতি (১৯৪৬) | নাটক– ভিটেমাটি (১৯৪৬) |
মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মৃত্যু
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ৩ রা ডিসেম্বর মাত্র ৪৮ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকাল প্রয়াণ ঘটে।